মঞ্জুরে খোদা টরিক

যারা বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন খুব খারাপ তাদের কারণেই আফগানিস্তান শেষ হয়ে গেছে। তাদের বলছি, হ্যাঁ ভাই আসলেই সোভিয়েত ইউনিয়ন খুব খারাপ ছিলো। তারাই আফগানিস্তানের মতো একটি মধ্যযুগীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতির দেশে আধুনিকতার ছোঁয়া এনে দিয়েছিলো। নারী-পুরুষ সমতা ও উন্নত জীবনের স্বপ্ন-বাস্তবতা তৈরি করেছিলো। গোত্র শাসন, কাজির বিচার, জমিদার ও শাসন্ততন্ত্র ভেঙ্গে দিয়েছিলো। ধর্মভিত্তিক, গোত্রভিত্তিক শিক্ষার বিপরীতে আধুনিক শিক্ষার প্রচলন করেছিলো। যেখানে ছেলে-মেয়ে, ধনী-গরিব সবাই যেতে পারতো। তাদের সময় নতুন নতুন স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, বিল্ডিং-স্থাপনা তৈরি করেছিলো। মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারতো, নাটক, থিয়েটার করতে পারতো। অলিম্পিকে যেতে পারতো। সে দেশের ছেলে-মেয়েরা রাশিয়াসহ বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতো। তারা বিদেশি শিক্ষকদের পাঠিয়েছিলো তাদের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নত শিক্ষা দিতে। সস্তায় রাশিয়ার খাদ্য, গম, সার, তেল-গ্যাস-পণ্য রেশন পেতো।

ঘোড়া-গাধার গাড়ির বদলে থেকে মটরযান পেয়েছিলো। সেখানকার মেয়েরা নারী হিসেবে তাদের অধিকার-মর্যাদা পেয়েছিলো। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, তাদের পোশাকের স্বাধীনতা ছিলো, নিজেদের উন্নত জীবন গড়ে তোলার সুযোগ ছিলো। পেশা নির্বাচনের স্বাধীনতা ছিলো, তারা বিচারক, সচিব, এমপি, মন্ত্রী, ব্যবসায়িক সবই হতে পারতো। রাষ্ট্র ও সরকারের নীতিনির্ধারনীতে ছিলো। আজকের তালেবান সরকারের কাঠামোয় নারীর কোনো অবস্থান অস্তিত্ব নেই। আমেরিকা খুব ভালো, তারা তালেবানকে ক্ষমতায় এনে নারীদের লেখাপড়া বন্ধের ব্যবস্থা করেছে। তাদের চার দেওয়ালের মধ্যে ঢুকিয়েছে। সহশিক্ষা তো দূরের কথা, তাদের স্কুল-বিশ্ববিদ্যায়ই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের জীমে, পার্কে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে। এনজিওতে তাদের কাজ করা নিষিদ্ধ, সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে তারা নেই।

সিনেমা-থিয়েটার সেখানে নিষিদ্ধ, একাকী কোথাও যাওয়া নিষিদ্ধ। সেখানে নারীদের স্বামীর সেবা, সন্তান উৎপাদন, লালন-পালন, ঘরের কাজই শেষ কথা। একবেলা খাবারের জন্য সেখানে কন্যা শিশুদের বয়স্ক পুরুষদের সঙ্গে একাধিক স্ত্রী থাকার পরও বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও আপনারা তাদের প্রশংসা করতেই থাকুন। আর মার্কিনি ও পশ্চিমা শক্তি এখন সেখানে নারী অধিকার, মানবাধিকার, গণতন্ত্র নেই বলে মায়াকান্না করছে। অভিযোগ করছে, তালেবান এখনো জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতার চর্চা করছে। তারা দুষমনদের আশ্রয় দিচ্ছে। আহা ওনারা কি আল-কায়দা, তালেবানকে গণতন্ত্র-মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি করেছিলেন? তারাই প্রতিনিয়ত প্রচার করেছে সোভিয়েত রাশিয়া, সমাজতন্ত্র, ইসলাম ও মানবতার শত্রু তাদের ধ্বংস করতে হবে। সেটাই তো তাদের দেশে করেছে। সেটা করে মোল্লাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। সোভিয়েত সৈন্যদের সরিয়ে মার্কিন সৈন্যদের ঘাটি তৈরি করা হয়েছিলো।  ২০ বছর সেখানে কীসের চাষাবাদ করেছেন? সেখানে সমাজতন্ত্রের পক্ষের শাসক ছিলো আপনারাই তো তালেবানকে দিয়ে তাদের সরিয়ে দিয়েছেন। তার পরিণতি কি হলো? মোল্লাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলো।

সে দেশের সমাজ-অর্থনীতিকে শেষ করে নারীদের জীবনকে নরকে পরিণত করেছে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্যদের উপস্থিতিতে- মানবাধিকার ছিলো। তারা আধুনিক ও উন্নত জীবনের দিকে ধাবিত হচ্ছিলো সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহার মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাবর্তনে এক দুর্নীতিগ্রস্ত পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠান চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্যদের উপস্থিতি সমর্থন করছি না, কিন্তু মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতি সে দেশের সমাজ-রাজনীতির পরিস্থিতি কি হলো তা কিছুটা বোঝা গেলো। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে আফগানিস্তানের উজ্জ্বল অতীতের ছবি-ভিডিও প্রদর্শন করা হয় তা সোভিয়েত জমনার আফগানিস্তানেরই চিত্র। লেখক ও গবেষক